শিশির কুয়াশা মেঘ ও বৃষ্টি
শিশির কুয়াশা মেঘ ও বৃষ্টি
প্রমথনাথ সেনগুপ্ত
সূর্যের তাপে সমুদ্র, নদী, পুকুর—এ সব থেকে জল সব সময় বাষ্প
হয়ে হাওয়ায় মিশে যাচ্ছে।
হাওয়ার ভিতরে যে জলের বাষ্প রয়েছে তা সহজেই দেখানো যায়। একটি
কাঁচের গ্লাসের মধ্যে কয়েক টুকরো বরফ ফেলে দিলে কিছুক্ষণ পরে দেখা যাবে যে, ঐ গ্লাসের
বাইরের দিকে বিন্দু বিন্দু জলের কণা জড়ো হয়েছে। শুকনো কাপড় দিয়ে গ্লাসটাকে মুছে দিলে
সঙ্গে সঙ্গে আবার ছোট ছোট জলের কণা এসে সেখানে জমা হয়। এসব জলের কণা এলো কোথা থেকে?
ভিতরে বরফ থাকায় গ্লাসটা ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হয়। গ্লাসের চারদিক ঘিরে তার কাছাকাছি যে
হাওয়া আছে গ্লাসের গায়ে লেগে সেই হাওয়া তখন ঠাণ্ডা হতে থাকে। আস্তে আস্তে গ্লাসটা যখন
একটা বিশেষ মাত্রায় ঠাণ্ডা হয় তখন তার সংস্পর্শে এসে হাওয়ার জলীয় বাষ্প আর বাষ্প-আকারে
থাকতে পারে না, জমে জলের কণায় পরিণত হয়। এইজন্যই আইসব্যাগে বরফ পুরে দিলে তার বাইরের
দিকটা ভিজে ওঠে, মনে হয় যেন ব্যাগটার গায়ে ফুটো আছে, ভিতরের বরফ-জল ঐ ফুটো দিয়ে বাইরে
বেরিয়ে এসেছে। ব্যাগে বরফ বা খুব ঠাণ্ডা জল না থাকলে তার বাইরে কিন্তু কোনো জল জমতে
দেখা যায় না।
এর থেকেই বোঝা গেল, হাওয়ায় জলের বাষ্প মিশে আছে। এই জলীয় বাষ্প
একেবারে স্বচ্ছ, তাই চোখে দেখতে পাই না।
শীতের রাতে ঘাসের উপর, গাছের পাতায়, আমরা শিশির জমতে দেখি। দিনের
বেলা সূর্যের উত্তাপে মাটি গরম হয়, সূর্য অস্ত গেলে তাপ ছেড়ে দিয়ে ঐ মাটি ঠাণ্ডা হতে
থাকে। শীতকালে শেষরাত্রির দিকে ঐ মাটি এতটা ঠাণ্ডা হয় যে, তার সংস্পর্শে এসে হাওয়ার
জলীয় বাষ্প জমে গিয়ে জলের কণার আকারে জমা হতে থাকে ঘাসে ও গাছের পাতায়। এই জলকণাকেই
আমরা বলি শিশির। মাটির উপরেও শিশির পড়ে, মাটি ঐ জল শুষে নেয় বলে তা আর আমরা দেখতে পাই
না।
কখনো কখনো হাওয়ার ভিতরকার জলীয় বাষ্প খুব ছোটো ছোটো জলের কণায়
জমে গিয়ে মাটির কাছে হাওয়ার উপর ভেসে বেড়ায়। একেই বলি কুয়াশা, খুব নিচু মেঘও একে বলা
যায়।
শীতকালের চেয়ে গ্রীষ্মকালে পৃথিবী সূর্যের উত্তাপ পায় অনেক বেশি, তাই রাত্রিতে মাটি এতটা ঠাণ্ডা হয় না যাতে তার গায়ে ঠেকে জলের বাষ্প জমে জল হতে পারে। এইজন্যই গ্রীষ্মকালে শিশির পড়ে না। আয়নার উপর আলো পড়লে সেই আলো যেমন ফিরে আসে, মেঘের গায়ে ঠেকে তাপও তেমনি ফিরে আসে। রাত্রিতে মাটি তাপ ছেড়ে দেয়, উপরে উঠতে গিয়ে ঐ তাপ মেঘের গায়ে বাধা পেয়ে আবার মাটিতেই ফিরে আসে। মেঘলা দিনে তাই গরম বোধ করি। মাটি যতটা ঠাণ্ডা হলে তাতে শিশির জমতে পারে, আকাশে মেঘ থাকলে ততটা ঠাণ্ডা হয় না, তাই শিশিরও পড়ে না।
শুকনো হাওয়ার চেয়ে জলের বাষ্প অনেক হালকা, তাই জল বাষ্প হলে সেই বাষ্প ক্রমাগত উপরের দিকে উঠে যায়। মাটি থেকে যতই উপরে উঠে যায়, হাওয়া ততই ঠাণ্ডা হতে থাকে; বেলুন ও এরোপ্লেনে চড়ে যাঁরা অনেক উঁচুতে উঠেছেন তাঁদের কাছ থেকে এ খবর আমরা জেনেছি। জলের বাষ্প উপরে উঠলে ঠাণ্ডা হতে থাকে, তার পর এমন একটা সময় আসে যখন ঐ ঠাণ্ডায় বাষ্প জমে ছোটো ছোটো জলের কণা হয়ে হাওয়ার উপর ভেসে বেড়ায়। এইভাবে অসংখ্য জলের বিন্দু সৃষ্টি হয়ে হাওয়াতে ভাসতে থাকে। এই ভাসন্ত জলের কণাগুলিকে আমরা বলি মেঘ।
ঠাণ্ডা হাওয়া
এসে এই মেঘের গায়ে লাগলে অনেকগুলি জলের কণা একত্র হয়ে বড়ো বড়ো জলের ফোঁটায় পরিণত হয়।
এই ফোঁটাগুলি তখন এত ভারী হয় যে হাওয়াতে ভেসে থাকতে পারে না, পৃথিবীর টানে নেমে আসে
মাটির উপর—আমরা বলি, বৃষ্টি হচ্ছে। যে জল মাটির উপরে থাকে, বাষ্প হয়ে আকাশে উঠে গিয়ে
সেখানকার ঠাণ্ডায় জমে সে জল আবার মাটিতেইই ফিরে আসে।
…………………………………………………………………………………..……..
প্রশ্ন: পানি বাষ্প হয়ে কোথায় যায়?
প্রশ্ন: বাতাসে পানি থাকে কিভাবে?
প্রশ্ন: হাওয়াতে জল আছে কিভাবে বুঝা যাবে?
উত্তর:
সূর্যের তাপে সমুদ্র, নদী, পুকুর—এ সব থেকে জল সব সময় বাষ্প
হয়ে হাওয়ায় মিশে যাচ্ছে।
হাওয়ার ভিতরে যে জলের বাষ্প রয়েছে তা সহজেই দেখানো যায়। একটি
কাঁচের গ্লাসের মধ্যে কয়েক টুকরো বরফ ফেলে দিলে কিছুক্ষণ পরে দেখা যাবে যে, ঐ গ্লাসের
বাইরের দিকে বিন্দু বিন্দু জলের কণা জড়ো হয়েছে। শুকনো কাপড় দিয়ে গ্লাসটাকে মুছে দিলে
সঙ্গে সঙ্গে আবার ছোট ছোট জলের কণা এসে সেখানে জমা হয়। এসব জলের কণা এলো কোথা থেকে?
ভিতরে বরফ থাকায় গ্লাসটা ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হয়। গ্লাসের চারদিক ঘিরে তার কাছাকাছি যে
হাওয়া আছে গ্লাসের গায়ে লেগে সেই হাওয়া তখন ঠাণ্ডা হতে থাকে। আস্তে আস্তে গ্লাসটা যখন
একটা বিশেষ মাত্রায় ঠাণ্ডা হয় তখন তার সংস্পর্শে এসে হাওয়ার জলীয় বাষ্প আর বাষ্প-আকারে
থাকতে পারে না, জমে জলের কণায় পরিণত হয়। এইজন্যই আইসব্যাগে বরফ পুরে দিলে তার বাইরের
দিকটা ভিজে ওঠে, মনে হয় যেন ব্যাগটার গায়ে ফুটো আছে, ভিতরের বরফ-জল ঐ ফুটো দিয়ে বাইরে
বেরিয়ে এসেছে। ব্যাগে বরফ বা খুব ঠাণ্ডা জল না থাকলে তার বাইরে কিন্তু কোনো জল জমতে
দেখা যায় না।
এর থেকেই বোঝা গেল, হাওয়ায় জলের বাষ্প মিশে আছে। এই জলীয় বাষ্প
একেবারে স্বচ্ছ, তাই চোখে দেখতে পাই না।
প্রশ্ন: শিশির কী?/শিশির কাকে বলে? শিশির কেন পরে?
উত্তর:
শীতের রাতে ঘাসের উপর, গাছের পাতায়, আমরা শিশির জমতে দেখি। দিনের
বেলা সূর্যের উত্তাপে মাটি গরম হয়, সূর্য অস্ত গেলে তাপ ছেড়ে দিয়ে ঐ মাটি ঠাণ্ডা হতে
থাকে। শীতকালে শেষরাত্রির দিকে ঐ মাটি এতটা ঠাণ্ডা হয় যে, তার সংস্পর্শে এসে হাওয়ার
জলীয় বাষ্প জমে গিয়ে জলের কণার আকারে জমা হতে থাকে ঘাসে ও গাছের পাতায়। এই জলকণাকেই
আমরা বলি শিশির। মাটির উপরেও শিশির পড়ে, মাটি ঐ জল শুষে নেয় বলে তা আর আমরা দেখতে পাই
না।
প্রশ্ন: কুয়াশা কী?
কুয়াশা কাকে বলে?
উত্তর:
কখনো কখনো হাওয়ার ভিতরকার জলীয় বাষ্প খুব ছোটো ছোটো জলের কণায়
জমে গিয়ে মাটির কাছে হাওয়ার উপর ভেসে বেড়ায়। একেই বলি কুয়াশা, খুব নিচু মেঘও একে বলা
যায়।
প্রশ্ন: কেন গ্রীষ্মকালে শিশির পরে না?
উত্তর:
শীতকালের চেয়ে গ্রীষ্মকালে পৃথিবী সূর্যের উত্তাপ পায় অনেক বেশি,
তাই রাত্রিতে মাটি এতটা ঠাণ্ডা হয় না যাতে তার গায়ে ঠেকে জলের বাষ্প জমে জল হতে পারে।
এইজন্যই গ্রীষ্মকালে শিশির পড়ে না।
প্রশ্ন: মেঘলা দিনে গরম লাগে কেন?/ মেঘলা দিনে শিশির পরে না
কেন?
উত্তর:
আয়নার উপর আলো পড়লে সেই আলো যেমন ফিরে আসে, মেঘের গায়ে ঠেকে
তাপও তেমনি ফিরে আসে। রাত্রিতে মাটি তাপ ছেড়ে দেয়, উপরে উঠতে গিয়ে ঐ তাপ মেঘের গায়ে
বাধা পেয়ে আবার মাটিতেই ফিরে আসে। মেঘলা দিনে তাই গরম বোধ করি। মাটি যতটা ঠাণ্ডা হলে
তাতে শিশির জমতে পারে, আকাশে মেঘ থাকলে ততটা ঠাণ্ডা হয় না, তাই শিশিরও পড়ে না।
প্রশ্ন: মেঘ কী?/ মেঘ কাকে বলে?
উত্তর:
শুকনো হাওয়ার চেয়ে জলের বাষ্প অনেক হালকা, তাই জল বাষ্প হলে
সেই বাষ্প ক্রমাগত উপরের দিকে উঠে যায়। মাটি থেকে যতই উপরে উঠে যায়, হাওয়া ততই ঠাণ্ডা
হতে থাকে; বেলুন ও এরোপ্লেনে চড়ে যাঁরা অনেক উঁচুতে উঠেছেন তাঁদের কাছ থেকে এ খবর আমরা
জেনেছি। জলের বাষ্প উপরে উঠলে ঠাণ্ডা হতে থাকে, তার পর এমন একটা সময় আসে যখন ঐ ঠাণ্ডায়
বাষ্প জমে ছোটো ছোটো জলের কণা হয়ে হাওয়ার উপর ভেসে বেড়ায়। এইভাবে অসংখ্য জলের বিন্দু
সৃষ্টি হয়ে হাওয়াতে ভাসতে থাকে। এই ভাসন্ত জলের কণাগুলিকে আমরা বলি মেঘ।
প্রশ্ন: বৃষ্টি কী? / বৃষ্টি কাকে বলে? / বৃষ্টি কেন হয়?
উত্তর:
ঠাণ্ডা হাওয়া এসে এই মেঘের গায়ে লাগলে অনেকগুলি জলের কণা একত্র
হয়ে বড়ো বড়ো জলের ফোঁটায় পরিণত হয়। এই ফোঁটাগুলি তখন এত ভারী হয় যে হাওয়াতে ভেসে থাকতে
পারে না, পৃথিবীর টানে নেমে আসে মাটির উপর—আমরা বলি, বৃষ্টি হচ্ছে।
Comments
Post a Comment